বিদ্যমান আইনটি প্রণীত হয়েছিল সেই পাকিস্তান আমলে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ২১ বছর আগে। এর নাম আমদানি ও রপ্তানি (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৫০। এর বদলে নতুন আইন করা হচ্ছে, যার নাম আমদানি ও রপ্তানি আইন, ২০২৪। অর্থাৎ নতুন আইনের শিরোনাম থেকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ শব্দটি বাদ যাচ্ছে। এবারের আইনে পণ্যের পাশাপাশি সেবাও যুক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ সেবা আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আমদানি ও রপ্তানি আইন, ২০২৪–এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তা সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের আইনে শুধু পণ্যের কথা বলা ছিল। এখন বাণিজ্যিকভাবে সেবা কার্যক্রমকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পণ্যের মতো সেবা আমদানি–রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। তবে সরকার কোনো পণ্য বা সেবা নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি এ বিষয়ে আদেশ ও বিধিবিধান প্রণয়ন করতে পারবে। নতুন আমদানি ও রপ্তানি নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন; দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও সুরক্ষা; জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ; বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়ন ও ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো পণ্য এবং সেবা আমদানি বা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করা সমীচীন ও দরকারি। তাই আইনটি নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে।
বিদ্যমান আমদানি ও রপ্তানি (নিয়ন্ত্রণ) আইনটি যখন প্রণীত হয়েছিল তখন এতে শুধু পণ্য আমদানি–রপ্তানির কথা বলা হয়েছিল। সে জন্য নতুন আইনে পণ্যের পাশাপাশি সেবা আমদানি–রপ্তানির কথাও বলা হয়েছে। বিদ্যমান আইন ১৯৬২ সালে একবার এবং পরে বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৫ সালে আরেকবার সংশোধন করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে প্রধান আমদানি–রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিসিআইই) কাজকে যুগোপযোগী করা হয়। তবে এবারই প্রথম আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলো।
বিদেশ থেকে পণ্য ও সেবা আমদানি করতে গেলে সিসিআইই থেকে আমদানি অনুমতি সনদ (আইআরসি) নিতে হয়। আর বিদেশে পণ্য রপ্তানি করতে গেলেও একই দপ্তর থেকে নিতে হয় রপ্তানি অনুমতি সনদ (ইআরসি)। উভয় ক্ষেত্রেই একাধিক শর্ত থাকে, যেগুলো আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের মানতে হয়।
কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে এক বছরের জেল বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা আছে বিদ্যমান আইনে। নতুন আইনের খসড়ায় জেলে থাকার বিধান এক বছরই রাখা হয়েছে। তবে জরিমানার পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকার কথা বলা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘনের দায়ে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বিচার হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, অপরাধের বিচার হবে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে। নতুন আইনে ‘প্রথম শ্রেণি’ কথাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, আইনের মূল পাঠ বাংলায় হবে এবং সরকার প্রয়োজন মনে করলে মূল পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রকাশ করবে। বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে কোনো বিরোধ হলে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। আর নতুন আইন পাস হওয়ার পর রহিত হয়ে যাবে ১৯৫০ সালের আইন।